নবী মুহাম্মদ সা. এর পিতা আব্দুল্লাহ ও আফ্রিকান মেয়ে "বারাকাহ" এর কাহিনী

নবী মুহাম্মদ সা. এর পিতা আব্দুল্লাহ, একদিন মক্কার বাজারে গিয়েছিলেন কিছু কেনা-কাটা করার জন্য I এক জায়গায় তিনি দেখলেন, এক লোক কিছু দাস- দাসী নিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে বিক্রি করছেনI তিনি দেখলেন সেখানে দাঁড়িয়ে আছে, একটা ছোট কালো আফ্রিকান আবিসিনিয়ার মেয়ে I মেয়েটাকে দেখে আব্দুল্লাহর অনেক মায়া হলো, একটু রুগ্ন হালকা-পাতলা কিন্তু কেমন মায়াবী ও অসহায় দৃষ্টি দিয়ে তাঁকিয়ে আছে I আব্দুল্লাহ ভাবলেন ঘরে আমেনা একা থাকেন, মেয়েটা পাশে থাকলে আমেনার একজন সঙ্গী হবে I ইহা ভেবে তিনি মেয়েটাকে কিনে নিলেন I





 যেন খুব আলো করে তাঁর কোলে এসে পড়লো I পরদিন ভোরে আমেনা বারাকাকে এই স্বপ্নের কথা বললেন I উত্তরে বারাকা মৃদু হেঁসে বললেন, "আমার মন বলছে আপনার একজন সুন্দর সন্তানের জন্ম হবে" আমেনা তখনও জানতেন না তিনি গর্ভ ধারণ করেছেন কিন্তু কিছুদিন পর তিনি বুঝতে পারলেন, বারাকার সেইধারণাই সত্যি I আব্দুল্লাহ আর ফিরে আসেন নি, সিরিয়ার পথেই মৃত্যুবরণ করেছেন তিনি। আমেনার সেই বিরহ ও ভীষণ কষ্টের সময়ে, বারাকা ছিলেন একমাত্র সবচেয়ে কাছের সঙ্গী I একসময় আমেনার অপেক্ষা শেষ হয় এবং তিনি জন্ম দিলেন আমাদের প্রিয় নবীকে I শেখ ওমর সুলাইমানের বর্ণনা অনুযায়ী, সর্বপ্রথম আমাদের নবীকে দেখার ও স্পর্শ করার সৌভাগ্য হয়েছিল যে মানুষটির, সে হলো এই আফ্রিকান ক্রিতদাসী ছোট কালো মেয়েটি I আমাদের নবী (সাঃ)কে নিজ হাতে আমেনার

 কোলে তুলে দিয়েছিলেন, আনন্দে ও খুশিতে বলেছিলেন, "আমি কল্পনায় ভেবেছিলাম সে হবে চাঁদের মত কিন্তু এখন দেখছি, সে যে চাঁদের চেয়েও সুন্দর " এই সেই বারাকা I নবীজির জন্মের সময় উনার বয়স ছিল তের বৎসর I ছোটবেলায় শিশু নবীকে আমেনার সাথে যত্ন নিয়েছেন, গোসল দিয়েছেন, খাওয়াতে সাহায্য করেছেন,আদর করে ঘুম পাড়িয়েছেন বারাকা I মৃত্যুর সময় আমেনা, বারাকার হাত ধরে অনুরোধ করেছিলেন তিনি যেন তাঁর সন্তানকে দেখে শুনে রাখেন I বারাকা তাই করেছিলেন Iবাবা-মা দুজনকেই হারিয়ে, ইয়াতিম নবী (সা:) চলে আসলেন দাদা আবদুল মোত্তালিবের ঘরে I। উত্তরাধিকার সূত্রে নবী সা: হলেন বারাকার নতুন মুনিব I কিন্তু তিনি একদিন বারাকাকে মুক্ত করে দিয়েছেন, বললেন, -"আপনি যেখানে ইচ্ছে চলে যেতে পারেন , আপনি এখন থেকে স্বাধীন ও মুক্ত I" সেই শিশুকাল থেকেই নবী এই ক্রীতদাসের প্রথাকে দূর করতে চেয়েছিলেন Iবারাকা নবীকে ছেড়ে যেতে রাজি হলেন না I রয়ে গেলেন I মায়ের ছায়া হয়ে পাশে থেকে গেলেন I এমনকি নবীজির দাদা উনাকে বিয়ে দেয়ার জন্য বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু তিনি বারাকা কিছুতেই রাজি হলেন না I উনার একই কথা, -"আমি আমেনাকে কথা দিয়েছি, আমি কোথাও যাবো না" তারপর একদিন খাদিজা (রাঃ) এর সাথে নবীজির বিয়ে হলো I বিয়ের দিন নবিজী (সাঃ) খাদিজা (রাঃ) এর সাথে বারাকাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন I তিনি বললেন, "উনি হলেন আমার মায়ের পরে মা " বিয়ের পরে রাসূল (সাঃ) একদিন বারাকাকে ডেকে

 বললেন, -"উম্মি ! আমাকে দেখাশুনা করার জন্য এখন খাদিজা আছেন, আপনাকে এখন বিয়ে করতেই হবে I" (নবীজি উনাকে উম্মি ডাকতেন, নাম ধরে ডাকতেন না ) তারপর রাসূল (সাঃ) ও খাদিজা দুজন মিলে উনাকে উবাইদ ইবনে জায়েদের সাথে বিয়ে দিয়ে দিলেন I কিছুদিন পর বারাকার নিজের একটা ছেলে হলো, নাম রাখলেন আইমান I এরপর থেকে বারাকার নতুন নাম হয়ে গেলো "উম্মে আইমান"I


 একদিন বারাকার স্বামী উবাইদ মৃত্যু বরণ করেন, নবীজি গিয়ে আইমান ও বারাকাকে সাথে করে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন এবং সেখানেই থাকতে দিলেন I কিছুদিন যাওয়ার পর নবীজি( সা:)একদিন বেশ কয়েকজন সাহাবীকে ডেকে বললেন, "আমি একজন নারীকে জানি, যার কোন সম্পদ নেই, বয়স্ক এবং সাথে একটা ইয়াতিম সন্তান আছে কিন্তু তিনি জান্নাতি, তোমাদের মধ্যে কেউ কি একজন জান্নাতি নারীকে বিয়ে করতে চাও?" একথা শুনে জায়েদ ইবনে হারিসা (রাঃ) নবীজির কাছে এসে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন I নবীজি উম্মে আইমানের সাথে কথাবলে বিয়ের আয়োজন করলেন I বিয়ের দিন রাসূল (সাঃ) জায়েদকে বুকে জড়িয়ে আনন্দ ও ভালোবাসায়, ভেজা চোখে, কান্না জড়িত কণ্ঠে বললেন, "তুমি কাকে বিয়ে করেছো, জানো জায়েদ ?" -হাঁ, উম্মে আইমানকে I জায়েদের উত্তরে I নবীজি বললেন, -"না, তুমি বিয়ে করেছো, আমার মা কে " সাহাবারা বলতেন, রাসূল (সাঃ) কে খাওয়া নিয়ে কখনো জোর করা যেত না I তিনি সেটা পছন্দ করতেন না I

 কিন্তু উম্মে আইমান একমাত্র নারী, যিনি রাসূল (সাঃ) কে খাবার দিয়ে "খাও".." খাও".. বলে তাড়া দিতেন I নবি মোহাম্মদ সাঃ এর খাওয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত পাশে বসে থাকতেন I নবীজি মৃদু হেঁসে, চুপ চাপ খেয়ে নিতেন I নবী (সাঃ) উনার দুধ মা হালিমাকে দেখলে যেমন করে নিজের গায়ের চাদর মোবারক খুলে বিছিয়ে তার উপর হালিমাকে বসতে দিতেন ঠিক তেমনি মদিনায় হিজরতের পর দীর্ঘ যাত্রা শেষে উম্মে আইমান যখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন নবীজি (সা:) উনার গায়ের চাদরের একটা অংশ পানিতে ভিজিয়ে, উম্মে আইমানের মুখের ঘাম ও ধুলোবালি নিজের হাতে মুছে দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, "উম্মি ! জান্নাতে কখনো আপনার এইরকম কোন কষ্ট হবে না" নবীজি মৃত্যুর আগে সাহাবীদের অনেক কিছুই বলে গিয়েছিলেন I সেই সব কথার মধ্যে একটা ছিল, উম্মে আইমানের কথা I বলেছেন, "তোমরা উম্মে আইমানের যত্ন নিবে, তিনি আমার মায়ের মত I






কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যে মানুষটি আপনাকে পেতে সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করে কাঁদে তকে কখনো কাঁদাইওনা

 যে মানুষটি আপনাকে পেতে সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করে কাঁদে  তকে কখনো কাঁদাইওনা 0 0 0 0 more